বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নদী খননে অনিয়মের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেছে কৃষককূল। এ নিয়ে তারা স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এসব প্রতিবাদের কোনো তোয়াক্কা না করে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন ও মাটির ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে মাটি কাটায় ইসলামনগর ব্রীজটিও পড়েছে হুমকির মুখে। দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সিংগাইর-তালেবপুর সড়কের ইসলামনগর ব্রীজের নিচ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। সেতুটির পূর্ব পাশে বসানো হয়েছে স্থানীয় প্রযুক্তির ড্রেজার মেশিন। এলাকাবাসি জানান, নিয়ম বর্হিভূতভাবে ১১০ মিটার এ সেতুর নিচ থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার ফলে উত্তর পাশের পিলারগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়েেেছ। এভাবে মাটি কেটে বিক্রি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও জানান তারা।
নদীটির ইসলামনগর থেকে শুরু করে গোলড়া, বিনোদপুর, স্বরুপপুর শ্মশানঘাট, চাড়াভাঙ্গা ঘাট, বাঘারচর, মজলিশপুর, চরজামালপুর ও চরনয়াবাড়ি এলাকায় নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে বসানো হয়েছে শ্যালো মেশিনের ড্রেজার। আর এসব ড্রেজার দিয়েই উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। পাশাপাশি নদী তীরবর্তী ফসলি জমিতে চলছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাটি কাটার মহা কর্মযজ্ঞ। ভেকু দিয়ে কেটে প্রতিদিন শতশত ট্রলি মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছে। এতে আগুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষক সমিতির সভাপতি কমরেড নাসির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, একই স্থানে ২-৩ মাস ধরে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কোনো প্রকার নিয়মনীতি না মেনে দীর্ঘ সময় একই স্থানে মাটি কাটার ফলে আশপাশের ফসলি জমি ভেঙ্গে পড়ছে। এ নিয়ে কৃষকদের পক্ষ থেকে গত ১৭ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কৃষক নেতাদের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগী কৃষকদের সাথে নিয়ে চাড়াভাঙ্গা নদীর ঘাট এলাকায় নদী খননের নামে মাটির ব্যবসা বন্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না এ মাটির ব্যবসা।
স্থানীয় কৃষক নূরুল হক, সোহরাব মেম্বার ও মুফতি আব্দুল আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, নদী খননের নামে মাটির ব্যবসা নিয়ে আমরা যারা প্রতিবাদ করছি তাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানিসহ ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা এতে নিরাপদ নয় বলেও তারা জানান। বাংলাদেশ কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক আবিদ হোসেন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি নদী খনন নয়, এখানে হচ্ছে বালু ও মাটির জমজমাট ব্যবসা। নদীর সীমানা নির্ধারণ না করে পাড় না বেঁধেই একাধিক নিদির্ষ্ট স্থান থেকেই উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। পাশাপাশি কেটে নেয়া হচ্ছে কৃষকদের ফসলি জমির মাটি।
তালেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রমজান আলী বলেন, ব্্রীজটির কাছে গিয়ে দেখেছি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন অনুযায়ী মাটি কাটা হয়েছে। ব্্রীজের স্লোবের কাছে কিছু মাটি কাটা হলেই ক্ষতির সম্ভবনা নেই।
সিংগাইর উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ রুবাইয়াত জামান বলেন, আমি লোক পাঠিয়ে সত্যতা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, ইসলামনগর ব্রীজের অংশটি বাদ দিয়ে আমরা ড্রেজিং করছি। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এছাড়া আমরা নদীর ডিজাইন অনুযায়ী কৃষক আন্দোলনের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেঁ আমাদের অফিসারদের স্পটে মিটিং হচ্ছে, সেখানে পতাকা টেনে আমরা কাজ করছি।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, এ রকম একটি অভিযোগ আমার কাছে অনেক আগে এসেছিল। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছেও জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছিলাম বিষয়টি দেখার জন্য। ব্রীজ কোনোভাবেই ঝুঁকির মুখে পড়বে এ ধরনের কোনো তথ্য আমাকে দিতে পারেনি।
এসএস